সম্প্রতি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়ার ওপর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পক্ষ হতে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া উপস্থাপন করা হয়। উক্ত নতুন অধ্যাদেশ বিষয়ে চলছে নানা আলোচনা – সমালোচনা। নিয়ে আইনজীবী, আইনের ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক, বিচারক সবার মধ্যে চলছে তর্ক বিতর্ক। বিষয়টি বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেন দীর্ঘদিন লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনে কর্মরক বিজ্ঞ বিচারক জনাব মোহাম্মদ জুনায়েদ। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত একটি লেখা পোস্ট করেন। নিচে তা হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

”প্রশ্নোত্তরে লিগ্যাল এইড বিষয়ক নতুন আইন!
আপনার কান এখনো চিলে নেয়নি!!!
নিজের চোখ, কান, মাথা কাজে লাগিয়ে আইনটি নিজে নিজে বাংলায় পড়ে বিবেচনা করুন।
১. বন্টন, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া সমস্যা বা সিভিল ধরনের বিষয়ে মামলায় জরুরী নিষেধাজ্ঞা দরকার হলে কি হবে? লিগ্যাল এইডে ঘুরতে ঘুরতে মারা খাবে? নিষেধাজ্ঞার আদেশ কে দিবে?
উত্তর – ২১( ঘ) ধারায় লিগ্যাল এইড অফিসার জরুরী আদেশ দিতে পারবে। চীফ লিগ্যাল এইড অফিসার কমপক্ষে ১২/১৩ বছরের বিচারিক অভিজ্ঞতায় এরকম আদেশ দিলে ফলাফল হবে চমৎকার।
২. লিগ্যাল এইডের নোটিশ এভয়েড করলে বা পাত্তা না দিলে বিবাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্হা কি হবে? একতরফা সিদ্ধান্ত হবে নাকি বাদীকে অপারগতা পত্রপাঠ বিদায়? এর কনসিকোয়েন্স কি হবে?
উত্তর- নোটিশ যথাযথভবে জারী হওয়ার পর কেউ স্বেচ্ছায় না আসলে তিনি নোটিশ পেয়ে ও আসেন নাই এটা উল্লেখে প্রতিবেদন দিয়ে আপোষ চেষ্টা শেষ হবে। রিপোর্ট পেয়ে বাদী নিয়মিত কোর্টে চলে যাবে।
যেহেতু একজন বিচারক লিগ্যাল এইড অফিসার হিসাবে কাজ করেন, বেশীরভাগ মানে ৯৫% নাগরিক নোটিশ পেয়ে হাজির হন।
৩. লিগ্যাল এইড এর বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা কতদিন?
উত্তর- বিধিমালা অনুসারে অপরপক্ষ নোটিশ পেয়ে হাজির হওয়ার পর থেকে ০৭ দিন। মোবাইলে সমন জারী হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিস্পত্তি সম্ভব। কেউ আসতে না চাইলে মোবাইলে বলে দিবে। তখন তাৎক্ষনিক আপোষের চেষ্টা নথীজাত হয়ে নিয়মিত আদালতে মামলা দায়ের হবে।
৪. বিষয়টি অনেকটা একই বিষয়ে দুইবার মামলা করার মতো হয়ে গেছে। One after Another. লিটিগান্টদের এতো ধৈর্য আছে? তারা আশু রিলিফ চায়। খরচেও বিষয় আছে।
উত্তর – বিষয়টি বাইনারি নয়। লিটিগ্যন্টরা প্রায় বিনা খরচে এবং অবিশ্বাস্য কম সময়ে রিলিফ পাবেন।বাটোয়ারা মামলাগুলো কমপক্ষে ২০-৩০ বছর চলছে!!!! লিগ্যাল এইডে এসব মামলায় সর্বোচ্চ ১ বছরে মীমাংসা হবে। দায়েরকৃত আবেদন এর ৩০% মীমাংসা হলেই যথেষ্ট। বাকি ৫০% কোর্টে যাবে।
৫. বিশেষকরে বন্টন মামলা সহকারী জজ আদালতে কেউ ফাইলিং না করে ভেলুয়েশন যুগ্ম জেলা জজ কোর্টে ফাইলিং বাড়বে। অপরাপর সিভিল মামলায়ও ভেলুয়েশন বাড়িয়ে বা এডভোলেরাম কোর্ট ফি দিয়ে সরাসরি যুগ্ম কোর্টে করা যায় কিনা চেষ্টা করবে।
উত্তর- নাগরিকরা এর সুফল বুঝতে পারলে এসব করবে না। আইনজীবীরা সচেতন হলে এগুলো হবে না।
মানুষের উপর এই মুহুর্তে সবচেয়ে জুলুম এর নাম বন্টন মামলা। এই আইনে ১ বছরেই নিস্পত্তি করা সম্ভব কিন্তু সিভিল কোর্টে সময় লাগবে কমপক্ষে ৫-১০ বছর।আপীলসহ ৩০-৪০ বছর!!!
৬. লিগ্যাল এইডের সিদ্ধান্ত কি রায়-ডিক্রির স্টাটাস পেয়েছে? জারী মামলার জন্য ব্যবহার করা যাবে? নামজারী বা বন্টন রেজিষ্ট্রেশন বা বন্টন দলিল হবে? খতিয়ান সংশোধন হবে? আমার মতে কোনটাই হবে না।
উত্তর- হবে, ২১গ ধারায় হবে।
৭. প্রচলিত আইন মোতাবেক ভূমি অফিস/রেজিষ্ট্রেশন অফিস সিভিল কোর্টের রায় মানবে, অন্য সরকারি অফিসের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়। এটার ব্যাপারে আইনে কি বিধান আছে?
উত্তর- জারীতে গেলে কোর্টের আদেশ সবাই মানবে। এটা তো সকল পক্ষের ইচ্ছেতে মীমাংসা হয়। ফলে বাদী, বিবাদীর সফল আপোষ সবাই মানবে। আইনগত ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করার সুযোগ আছে।
৮. চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নূন্যতম ২০জন করে লিগ্যাল এইড অফিসার দিবে সরকার? এতো অবকাঠামো বাড়বে? নাহলে এই প্রজেক্ট উল্টো জুলুম হবে এবং জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট কোর্ট মাছি মারবে।
উত্তর- প্রতি জেলা একজন চীফ লিগ্যাল এইড অফিসার সহ মোট তিনজন বিচারক লিগ্যাল এইড অফিসের দায়িত্বে থাকবে। বর্তমান বাজেট, স্টাফ সহ সবকিছু তিনগুণ বাড়াতে হবে। এটার জন্য বহু সময় আছে।
কারন এই আইন কার্যকর হবে জেলা ভেদে পরিবেশ সৃষ্টি ও অবকাঠামো, মেডিয়েটর ও বিচারক নিয়োগ এর পর।
ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভাগীয় শহরে কমপক্ষে ২০ জন করে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজসহ যোগ্য, পেশাদারদের স্পেশাল মেডিয়েটর করা হলে একটা অসাধারণ ফলাফল আসবে।
৯. একই ধরনের চলমান মামলার বিষয়ে লিগ্যাল এইডে যাবে না কেন? বিচারক বা পক্ষগণ চাইলেও চলমান মামলা লিগ্যাল এইডে যাবে না কেন?
উত্তর- পক্ষরা, বিচারকরা চান কিন্তু বেশীরভাগ সময় আইনজীবীদের একটি অংশ এবং মামলায় হেরে যাবে এমন পক্ষ বিচার বিলম্বিত করার সব চেষ্টা করে অথচ আপোষে বিরোধ মীমাংসা চান না।
এই যুগের নাগরিকরা সচেতন তাই বেশীরভাগ যাবে।
১০. চেকের কজ অব একশন ও তামাদি জটিলতায় রিভিশন ও হাইকোর্ট হবে। হয়রানি ও সময়ক্ষেপণ বাড়বে। চেকের বিষয় টোটালি বাদ দিতে হবে।
উত্তর- আইনে লিগ্যাল এইড এর সময়টি তামাদি থেকে বাদ দেওয়ার বিধান করেছে।
১১. আপনি জোর করে সালিশ করবেন? সালিশী কার্যক্রমে যে কোন সিভিল মামলায় ও সেশন কোর্ট/ট্রাইবুনাল বিচার্য মামলা ব্যতিত সকল মামলায় মামলা দায়েরের পরে বা চলমান মামলায় করা যেতো না?
উত্তর-
আপোষ সবসময় স্বেচ্ছায় হয়। বেশীরভাগ সময় মধ্যস্বত্বভোগীরা বিচার প্রার্থীদের আপোষ করতে দেন না। কেউ আপোষ করতে না চাইলে লিগ্যাল এইড অফিস এসে লিখিতভাবে বলবেন- আমি আপোষ চাই না। তখন তাৎক্ষনিক মামলা কোর্টে চলে যাবে।
……
State Acquisition and Tenacy Act আইনটি ১৯৫০ সালে করা হলে ও ঐ আইনে উল্লেখিত ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল হয়েছে ঐ আইন পাসের প্রায় ৬০/৬৫ বছর পর!!! সকল পরিবেশ, অবকাঠামো তৈরী করার পর। আগামী ০১ বছর পরে হলে ও এই আইন জেলা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়া কার্যকর হোক।”
Be the first to comment