সারাদেশের প্রতিটা জেলাতেই বিচারাদালত আছে। দেওয়ানী-ফৌজদারি সকল ধরণের মামলার বিচারকার্য সেগুলোতে পরিচালিত হয়। নিজ নিজ জেলা শহরেই জনগণ বিচার চাইতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যান। এর বাইরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাতেও কোর্ট আছে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপীল, রিভিসন প্রভৃতি দায়ের করে থাকে উচ্চ আদালতে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত বলতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট -এর হাইকোর্ট বিভাগ। আর তা করতে হলে দেশের সকল জেলার মানুষকেই ছুটে আসতে হয় ঢাকায়। কেমনা আমাদের সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবস্থান ঢাকায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। ৩রা জুলাই, ২০২৫ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের নবম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন নিয়ে আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতা কর্মী, আইনের ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক, বিচারক সবার মধ্যে চলছে তর্ক বিতর্ক। এসবের মধ্যে থেকে যেমন উঠে আসছে নানা ধরণের সুবিধার কথা আবার অসুবিধা – আশঙ্কার কথাও উঠে আসছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা লেখালেখি করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ জুডিয়াল সার্ভিসে কর্মরত বিজ্ঞ বিচারক জনাব তালহা মুহাম্মদ এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উত্থাপন করেন। যা সরাসরি তুলে ধরা হলোঃ
বিজ্ঞ বিচারক জনাব তালহা মুহাম্মদ (ছবিঃ ফেসবুক)
” সিন্ডিকেট সব জায়গায় আছে। রাজনীতিতে সিন্ডিকেট আছে; বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আছে। কুকুরের এলাকভিত্তিক সিন্ডিকেট আছে। আবার ঢাকা শহরের বিভিন্ন ভিক্ষুকদেরও সিন্ডিকেট আছে। সিন্ডিকেটের হিসাবটা খুবই সহজ। সিন্ডিকেটের কাজ হচ্ছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা। এমনকি সেটা দেশ ও দশের ক্ষতি করে হলেও।
আগে জেলা জজ কোর্টের উকিলদের বেশিরভাগ ছিলো ল কলেজ পাস। তখন বার কাউন্সিল পরীক্ষা হতো সহজ, আবার প্রকাশ্যে নকলও করা যেতো। এজন্য দুয়েকজন বাদে খুব দক্ষ আইনজীবী জেলা জজ কোর্ট পাওয়া যেতো না। কিন্তু বর্তমানের চিত্র খুব ভিন্ন। প্রায় সকল জেলাতেই বেশ কিছু আইনজীবী আছেন যারা অনেক বেশি দক্ষ ও যোগ্য। বিশেষত পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আইনের শিক্ষার্থীরাই জেলা জজ কোর্টের আইনপেশায় নিযুক্ত হচ্ছেন। তাদের কর্মদক্ষতা অনেক প্রশংসা করার মতো।
হাইকোর্ট কেন্দ্রিক যারা প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী তারা ভাবছেন বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্ট চলে গেলে তাদের মামলা কমে যাবে। এজন্যই তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। এই জিনিসটাই এখন সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করছে। তাদের মামলা কমে যাওয়ার আশঙ্কা একদম অমূলক। বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট হলে ঢাকার অনেক বিজ্ঞ আইনজীবীরাই বিভাগীয় শহরে গিয়ে প্রাকটিস করবেন। আর ঢাকায় হাইকোর্টের যেই বেঞ্চ থাকবে তাতে মামলা বেশি থাকবে এমনিতেই। অন্য সকল বিভাগীয় শহরের মামলা মিলেও রাজধানী ঢাকার হাইকোর্টের সমান মামলা হবে না। এক্ষেত্রে ঢাকার আইনজীবীদের মামলা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
যারা আইন পড়ে তাদের সবার জজ হওয়ার সুযোগ নাই। অনেকেই আগ্রহ থেকেই আইন পেশায় যায়৷ কিন্তু এদেশে আইন পেশায় টিকে থাকা অনেকবেশি সংগ্রামের। ঢাকা শহরে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের টিকে থাকা নিয়মিত যুদ্ধ করার মতো। পাশাপাশি ঢাকা জজকোর্টের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। এজন্য দুইদিন প্রাকটিসে গিয়ে তিন দিনের দিন ফিরে আসতে দেখেছি অনেককে। অথচ বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ হলে অনেকেই বিভাগীয় শহরগুলোতে গিয়ে প্রাকটিস করতে আগ্রহী হবে।
জেলা জজকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা অনেক দক্ষ। এমনকি তাদের মধ্যে অনেকের হাইকোর্টের সনদ আছে। কিন্তু জেলা শহর থেকে এসে ঢাকায় হাইকোর্টে কোন মামলায় পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ হলে তখন তারা নিজেদের মেধাকে আরো বেশি কাজে লাগাতে পারবেন। বিভাগীয় হাইকোর্টে মামলাও পরিচালনা করতে পারবেন।
যে যেই পেশায় থাকে তাদের সবারই মন চায় সেই পেশার সর্বোচ্চ স্তরে যাওয়ার। বিজ্ঞ আইনজীবীদের জন্য সেই স্তরটা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রাকটিস করার সুযোগ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাগেরহাট কিংবা নাটোরের কোন আইনজীবীর পক্ষে সেটা সম্ভব না। রাজশাহী কিংবা খুলনা বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ হলে তাদের পক্ষে সেই সুযোগটা নেওয়া সম্ভব। কারণ বাগেরহাট থেকে খুলনা আর নাটোর থেকে রাজশাহীর দূরত্ব খুবই কম।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আইন পড়েছে তাদের জন্য ঢাকায় প্রাকটিস করা যতটা সহজ রাবি, চবি বা সেখানকার অন্য কোন ল গ্রাজুয়েটের জন্য এটা এতো সহজ না। তাদের জন্য চট্টগ্রাম কিংবা রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তুলনামূলক সহজ হবে। এজন্য বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ হলে তাদের জন্য এক অবারিত সুযোগ উন্মোচিত হবে। তাদের কাউকে অযথা ঢাকার মতো অসুস্থ শহরে এসে সংগ্রাম করতে হবে না।
সকল রাজনৈতিক দলগুলো বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনে একমত পোষণ করেছেন। অথচ হাতেগোনা কয়েকজন আইনজীবী সেটার বিরোধিতা করে মিছিল করেছেন। তাদের বাহিরে জেলা জজকোর্টে অসংখ্য আইনজীবী রয়েছেন। কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে তা জনগণের ভালোমন্দ বিবেচনা করেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কোন সিন্ডিকেটের বাধার সম্মুখে থেমে যাওয়া উচিত হবে না। তদুপরি জেলা জজকোর্টের আইনজীবীদের পথ রুদ্ধ করার কোন অধিকার ঢাকার আইনজীবীদের নাই।
যেহেতু একটি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী একটি জনকল্যাণমুখী প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে সেহেতু প্রস্তাবের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত হবে এর পক্ষে কাজ করা। স্বার্থবাদীরা মিছিল বের করলে স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের উচিত সমাবেশ করা। জেলা জজকোর্টের আইনজীবী, আইন শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজ এই প্রস্তাবের পক্ষে সরব ভূমিকা না রাখলে জনগণের ন্যায়বিচারের পথ বহুদিনের জন্য পিছিয়ে যাবে।
আইনজীবী হওয়ায় ক্ষেত্রে যে বাধা একজন ল গ্রাজুয়েটকে ফেস করতে হয় তাতে বেশিরভাগই টিকে থাকতে পারে না। অনেকে সেই ভয়ে আইনজীবী হওয়ার কথা কল্পনাও করে না। বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ হলে বর্তমানে যারা আইনের শিক্ষার্থী সামনে তাদের জন্য আইনজীবী হওয়ার পথ অনেক সহজ হবে।”
সারাদেশের প্রতিটা জেলাতেই বিচারাদালত আছে। দেওয়ানী-ফৌজদারি সকল ধরণের মামলার বিচারকার্য সেগুলোতে পরিচালিত হয়। নিজ নিজ জেলা শহরেই জনগণ বিচার চাইতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যান। এর বাইরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাতেও কোর্ট আছে। কিন্তু […]
সারাদেশের প্রতিটা জেলাতেই বিচারাদালত আছে। দেওয়ানী-ফৌজদারি সকল ধরণের মামলার বিচারকার্য সেগুলোতে পরিচালিত হয়। নিজ নিজ জেলা শহরেই জনগণ বিচার চাইতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যান। এর বাইরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাতেও কোর্ট আছে। কিন্তু […]
সারাদেশের প্রতিটা জেলাতেই বিচারাদালত আছে। দেওয়ানী-ফৌজদারি সকল ধরণের মামলার বিচারকার্য সেগুলোতে পরিচালিত হয়। নিজ নিজ জেলা শহরেই জনগণ বিচার চাইতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যান। এর বাইরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাতেও কোর্ট আছে। কিন্তু […]
Be the first to comment